বাঙালির অপরাধ জগতে অন্যতম অপরাধীদের মধ্যে পকেটমারের সংখ্যা অসংখ্য। বিশেষ করে শহর ও আধাশহর অঞ্চলে এদের দৌরাত্ম্য দেখবার মত।বাসে, ট্রেনে বা জনবহুল রাজপথ এদের প্রধান কর্মক্ষেত্র।
পকেটমার নানান জাতের নানান মর্যাদার হয়ে থাকে।অপরাধের পদ্ধতি ও গুরুত্বের উপর পকেটমারের অনেক গুলি শ্রেণী আছে। এই অপরাধ মূলক পেশাতেও স্পেশালাইজেশন কাজ করে।যেমন ছিঁচকে হচ্ছে, যারা শুধু রেজকি অর্থাৎ খুচরো পয়সাকড়ি তুলে থাকে।এরা সাধারণত অতি অল্পবয়েসের শিক্ষানবীশ।কেউ পাকা খবর অনুযায়ী টার্গেট নির্ণয় করে এবং তাদের অনুসরণ করে কার্য সিদ্ধি করে এরা ঘাঘু মাল। আবার বর্তমানে অনেক পকেটমার কেবল মোবাইল তুলে নেয়।
প্রত্যেক পকেটমারের একটি নিদৃষ্ট এলাকা আছে।পকেটমার তার শ্রেণি ও এলাকা সাধারণত ত্যাগ করেনা।পকেটমাররা অনেকেই ছোট্ট ছোট্ট দলে বিভক্ত হয়ে একত্রে নিজেদের কাজ করে।প্রতিটি দলের নিজস্ব একটি অঞ্চল আছে।নিজের অঞ্চলের বাইরে সচরাচর এরা যায় না।যেমন খিদিরপুরের থেকে ময়ূরভঞ্জে যারা কাজ করে তারা কখনই পার্কসার্কাস বা শিয়ালদা যায়না।আবার যারা খিদিরপুর থেকে গার্ডেনরিচে পকেটমারি করে তারা ধর্মতলায় এসে কাজ করবেনা।এলাকার বাইরে পকেট মারতে যাওয়ার অর্থ অন্যদের অধিকারে হাত দেওয়া।
পকেটমারদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যাদের “রাজাবাবু” বা ” বাদশাহ ” বলা হয়।এদের মাসিক আয় কখনো কখনো ৫০ থেকে ৬০ হাজারও হয়ে থাকে।অনেকে আছে যারা কেবল পকেটমারি করে সংসার চালায়।
পুরুষ পকেটমারদের বেশিরভাগ অবিবাহিত। কেবল পকেটমার কেন, অপরাধীদের শতকরা ৯০ জনই অবিবাহিত।তবে এদের বেশিরভাগ বেশ্যাসক্ত।আগে মূলত উদ্বাস্তু এবং অবাঙালিদের এই পেশায় দেখা গেলেও বর্তমানে মুসলিম সমাজের মধ্যে এই অপরাধের সংখ্যাধিক্য দেখতে পাওয়া যায়।
অনেক মহিলারাও এই পেশার সঙ্গে যুক্ত যারা বিভিন্ন শারীরিক কৌশলের দ্বারা টার্গেটকে প্রলুব্ধ করে নিজেদের কাজ হাসিল করে নেয়।তবে মনে রাখতে হবে এই কাজে নামার আগে প্রত্যেক পকেটমারকে গুরুর কাছে শিক্ষা নিতে হয়।
পকেটমারদের মধ্যেও কিছু নিষেধ ও কুসংস্কার আছে, যেমন পিছুডাক অমঙ্গলসূচক। ট্রামে বা বাসে উঠতে যদি পা পিছলে যায় তবে সে গাড়িতে আর উঠবেনা।বিবাহিতা মহিলা দেখে কাজে বার হওয়া শুভ লক্ষণ।তিনজন লোক এক সঙ্গে থাকলে তাদের পকেটমারা যাবেনা।