হীনতা বর্জনকারী মানব নিশ্চয়। হিন্দু বলে আপনারে দেয় পরিচয়।
হ্যাঁ হিন্দুত্ব একটি সুবিশাল সমাজ ব্যবস্থা, তাই হিন্দু বলতে কোন সম্প্রদায়কে বোঝায় না।হিন্দু শব্দের অর্থ উদার বিশ্বজনীনতা, হিন্দু শব্দ সংস্কৃতি বাচক, এক অপৌরুষেয় শব্দ।যে ভারত ভূখণ্ডে বৈদিক,বৌদ্ধ, শৈব, বৈষ্ণব, এমন কি তথাকথিত অন্য ধর্মের সকল অধিববাসীরাও হিন্দু।
আমাদের পূর্বপুরুষরা দৃপ্তকন্ঠে উচ্চারণ করে গেছেন।
“আসিন্ধুসিন্ধুপর্য্যন্ত যস্য ভারতভূমিকা পিতৃভূঃ পূণ্যভূশ্চৈব স বৈ হিন্দুরিতিস্মৃতঃ।
অর্থাৎ সিন্ধুদেশ থেকে আরম্ভ করে দক্ষিণে সিন্ধু অর্থাৎ সমুদ্র পর্যন্ত পৃথিবীর তাবৎ পুণ্য সংস্কার, পুণ্য আচার, পুণ্য অনুষ্ঠান, পুণ্য জ্ঞানের বিমল ধারা যেখানে পিতৃভূঃ অর্থাৎ জন্মগ্রহণ করেছে সেই পাবন ক্ষেত্রে আমরা বাস করি বলে আমাদের পিতৃপুরুষরা নিজেদের হিন্দু নামে অভিহিত করতেন।
সভ্যতার প্রারম্ভে একটি বিরাট মতবিরোধ ঘটেছিল আর্য সমাজে সম্প্রদায়গত। একদলে ছিল প্রজ্ঞার আরাধক ঈশ্বর নিষ্ঠ যাজ্ঞিক দেবতারা,অন্যদিকে ছিল ঈশ্বরনিষ্ঠ বীর অসুররা, এই সংঘাত ছিল জ্ঞানের সঙ্গে বাহুবলের, ঈশ্বর জ্ঞানের সঙ্গেই ছিল।
এখানে উল্লেখ্য এইযে অসুর কোন ভয়ানক জীব নয়, যেটা সাধারণত আমরা ভেবে থাকি, অসুর হল একদল বীর আর্য সম্প্রদায়, এবং অসুর শব্দটা একটি প্রশংসাসূচক শব্দ, বেদে বারংবার রুদ্র, ইন্দ্র, বরুণ, সূ্র্যকে অসুর শব্দে অলংকৃত করা হয়েছে, যারা বীর আর্য তারাই অসুর।
আর এই বীর আসুর সম্প্রদায়ই নীতির সংঘাতে পরাজিত হয়ে, নিজেদের আদি বাসস্থান ছেড়ে সিন্ধু নদের পশ্চিমে বসবাস শুরু করেন, কালক্রমে তাদের সংস্কৃত ভাষাররূপ পরিবর্তন হয়ে নতুন এক ভাষার জন্ম হয় গান্ধার অঞ্চলে, যার নাম বাখ্তারি।আবার বাখ্তারি থেকে অবেস্থান ভাষার জন্ম।
পশ্চিমে চলে যাওয়া জাতভাইরাই, তাদের এখানকার জাতিদের হিন্দু বলতেন।
প্রাচীন পারস্য ভাষায় হপ্তহিন্দু কথাটি আছে।এই হপ্তহিন্দুই বেদের “সপ্ত সিন্ধু”।প্রাচীন পারসিকরা “স” উচ্চারণ করতে পারতেন না, তাদের ভাষায় “স” এর উচ্চারণ “হ”।এজন্য তারা সোমকে হোম, সিন্ধুকে হিন্দু,সপ্তকে হপ্ত, স্বর্গ কে হ্বর বলতেন, তারাই পূর্বস্মৃতিকে স্মারক সম্মান দিয়ে সিন্ধুনদ হতে সমুদ্র পর্যন্ত মূল ভূখণ্ডের অধিবাসী অর্থাৎ আমাদের হিন্দু বলতেন।পারসিক ভাষাতে হিন্দু শব্দের কোন বিকৃত অর্থ নেই।
তবে লন্ডন থেকে ১৮৯২ সালে F.steingah প্রণীত A comprehensive Persian English Dictionary তে ইচ্ছাকৃত হিন্দু শব্দের বিকৃতি ঘটনানো হয়। ব্যুৎপত্তি অর্থে হিন্দু শব্দ নিষ্পন্ন নয়, সাহেব যেসব অর্থে হিন্দু নাম বর্ণিত করেছে তার কোন সামঞ্জস্যতাই নেই কেবল প্ররোচনা মূলক বিকৃতি, যেমন ঈশ্বর বিশ্বাসহীন,ভৃত্য, ক্রীতদাস, কালো, ইত্যাদি।
পারসিক শব্দে ‘হিন্দব’ বলে একটি শব্দ আছে কিন্তু তা গৌরব ও সম্মান জ্ঞাপক, আবার হনদ্ বলে একটি শব্দ হিব্রুতেও আছে।হনদ্ শব্দের অর্থ তেজ ও বিক্রম।
(তথ্যসূত্র শতপথ ব্রাহ্মণ গ্রন্থ ও বৈদিক ভারত)