বাড়ির ভেতরে (ইনডোর) ওয়াটার গার্ডেন বা স্বল্পপরিসরে জলের বাগান তৈরি করা খুব সহজ, এর জন্য প্রয়োজন শুধু জল ধরে রাখতে পারবে এমন যে-কোনো পাত্র। আপনি চাইলে বোতল কিংবা বয়ামের মধ্যেও জল-বাগান বানিয়ে নিতে পারেন। তামা, পিতল বা সীসা ছাড়া জলরোধক যে কোনো পাত্রই এক্ষেত্রে আপনার জন্য সহায়ক হবে। ধাতব পাত্র এড়িয়ে চলুন। কেননা অনেক সময় মেটাল গাছে দেয়া সারের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করায় তা গাছের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়।
ওয়াটার গার্ডেন বানানো শুধু সহজই নয়, প্রয়োজন অনুযায়ী এর মাপ কাস্টোমাইজ করা যায়। বাগান তৈরির এই পদ্ধতির জন রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলাও তেমন নেই।
গাছ রাখার জন্য একটি উপযুক্ত ধারক বাছাই করার পর, সেটি জল, নুড়ি, বালি, মার্বেল, পুঁতি বা অনুরূপ উপাদান দিয়ে তাকে পূর্ণ করুন। সৌন্দর্যের ব্যাপারটি মাথায় রাখবেন এক্ষেত্রে। এরপর এই উপাদানগুলোর সঙ্গে কাঠ-কয়লা (চারকোল)-এর এক চিমটি গুঁড়ো বা ছোট একটি টুকরা যোগ করুন যাতে জল পরিষ্কার থাকে এবং দুর্গন্ধ না হয়।
এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ জলে দ্রবণীয় সার ব্যবহার করে জল ও সারের একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
সার প্রয়োগের পরে বাড়ির ভেতরে হওয়ার জন্য সঠিক গাছ বেছে নিন।
মানি প্ল্যান্টের মতো ঝুলন্ত উদ্ভিদ বা শাকপাতার জলেতে বংশবৃদ্ধি করা সহজ, তাই মূলী গাছপালার সঙ্গে এদের ব্যবহার করুন।
অন্যখান থেকে কেটে আনা গাছ জল বাগানে লাগানোর আগে পুরো গাছটি থেকে সম্পূর্ণরূপে মাটি ধুয়ে ফেলুন এবং এর গায়ের যে-কোনো পচে যাওয়া পাতা, ডালপালা বা শেকড় কেটে ফেলুন।
এবার জল-সার দ্রবণে গাছটি রাখুন, মাঝে মাঝে অবস্থা বুঝে আপনাকে সার বদলাতে হতে পারে। প্রতি চার থেকে ছয় সপ্তাহ অন্তর নিউট্রিশন সল্যুশন প্রতিস্থাপন করতে হবে। শ্যাওলার বৃদ্ধি কমাতে বেছে নিন অন্ধকার বা অস্বচ্ছ ধারক; তবে শ্যাওলা যদি নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে যায়, তাহলে আপনাকে ঘন ঘন সার-পানির মিশ্রণটি বদলাতে হবে।
গাছ নির্বাচনের সময় প্রতিটি গাছের জন্য দু’টি বিষয় বিবেচনা করবেন- এর শোভাময় গুণাবলী এবং এর ব্যবহারিক মূল্য। এই দু’টির ভালো সমন্বয় জলে যথেষ্ট অক্সিজেন ধরে রাখতে সক্ষম, সঙ্গে এটি সাহায্য করে শ্যাওলাকে সরিয়ে জল পরিষ্কার রাখায় এবং জলটবের বাস্তুসংস্থানে সামঞ্জস্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে নাইট্রোজেনের অংশটুকু সরিয়ে ফেলে।
জল বাগানের জন্য গাছপালা কিনতে না গিয়ে আগে একটি সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করুন। গাছ কেনার সময় খেয়াল রাখবেন যে, এটি যেন জলের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি জায়গা না নেয়।
কচুরিপানা, লেটুসের মতো ভাসমান উদ্ভিদ জলটবে জলের পৃষ্ঠের উপর অবাধে বড় হয় এবং আপনি এদের ছোট পুকুরটির যে-কোনো জায়গায়ও স্থাপন করতে পারেন। এরা এদের পাতার সাহায্যে জলেতে ছায়া প্রদান করে, এতে শ্যাওলা জন্মানোর জন্য প্রয়োজনীয় আলোর পরিমাণ কমে যায় এবং জলটব পরিষ্কার থাকে।
মনে রাখবেন যে, বাগান তৈরির সময় গাছগুলো সবসময় আপনার এলাকার বা আশপাশের নার্সারি থেকে কিনবেন, এতে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে, আপনার এলাকার জন্য কোন গাছ সবচেয়ে ভালো। কেনার সময় গাছগুলোকে এদের পাত্র থেকে উঠিয়ে এর শেকড়ের দিকে খেয়াল করুন। সুস্থ শেকড় সবসময় সাদা ও দৃঢ় হয়, বাল্ব ও টিউব লম্বায় বড় হবে।
জলজ উদ্ভিদের জন্য কাদামাটি সবচেয়ে ভালো, কেননা এটি গাছের জন্য পুষ্টি ধরে রাখতে পারে। অন্যদিকে ছোট গাছের জন্য বালি ব্যবহার করা ভালো; কিন্তু বড় গাছের জন্য না। নুড়ি পরিস্রবণ উদ্দেশ্যের জন্য ভালো কাজ করে, কেননা মাটির চেয়ে নুড়ি মাধ্যমে জল দ্রুত সঞ্চালিত হয়, আর তাই যে কোনো তরল সার এতে খুব সহজে মিশে যায়।