ঋণ মুকুব করা নিয়ে কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে কমবেশি সংঘাত সবসময়েই লেগে থাকেই। ইচ্ছাকৃত ঋণ না মেটানো ৫০জনের তালিকা নিয়ে টুইট সংঘাতে নামলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এবং কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী।
মঙ্গলবার টুইটারে একটি টুইটের মাধ্যমে রাহুল জানান পার্লামেন্টে কতজনের ঋণ মকুব করা হয়েছে তা জানতে চাওয়ায় উত্তর দেন নি অর্থমন্ত্রী কারন সেই তালিকায় বিজেপির মিত্রদের নাম ছিলো। কিন্তু বুধবার এর উত্তরে অর্থমন্ত্রী উল্টো ইউপিএ সরকারকেই কটাক্ষ করলেন। সম্প্রতি ৫০টি ইচ্ছাকৃত ঋণ না দেওয়া সংস্থার ৬৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা ঋণ মকুবের তালিকা প্রকাশ্যে এনেছে আরবিআই। তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতায় এসেই তথ্য দিয়েছে আরবিআই। সেই তালিকায় রয়েছে বিজয় মাল্য, মেহুল চোক্সীদের সংস্থার নামও।
তালিকা সামনে আসতেই মঙ্গলবার কেন্দ্র তথা বিজেপিকে তোপ দাগলেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছিলেন, সংসদে তিনি ঋণমকুব নিয়ে প্রশ্ন করলেও অর্থমন্ত্রী তার উত্তর দেননি। তিনি আরও লিখেছিলেন, যাঁদের ঋণ মকুব করা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই বিজেপি এবং সরকারের বন্ধু। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও রাহুল গান্ধীর সুরে সুর মিলিয়েছেন।
আর ঠিক এই ঘটনার পরেই বুধবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতিরমন একগুচ্ছ টুইটারে রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেন এবং সমস্ত বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘রাহুল গাঁধী এবং রণদীপ সুরজেওয়ালা জঘন্য ভাবে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করেছেন। কংগ্রেসের স্বভাব ও অভ্যেস মেনেই বিষয়টিকে প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে উত্তেজনা তৈরির করেছেন।’’
অর্থমন্ত্রীর দাবী, এই ঋণ মকুব করা হয়নি। বরং নন পারফর্মিং অ্যাসেট হিসেবে ওই সব সংস্থাগুলির ঋণ আদায় না হওয়ায় খাতে দেখানো হয়েছিল। সেই ঋণ এখনও উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্র সরকার।
তিনি জানিয়েছেন, যাঁদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণের টাকা ফেরাননি, অর্থ তছরুপ করে অন্যত্র পাচার করেছেন, অথবা ব্যাঙ্কের অনুমতি ছাড়া সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন, এমন সংস্থাগুলিকে স্বেচ্ছায় ঋণ না মেটানো সংস্থা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এবং তারা ইউপিএ জমানায় অনেক সুবিধাও পেয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশেই এই নন পারফর্মিং অ্যাসেট বিষয়টি তৈরি করেছিল ব্যাঙ্কগুলি। তৎকালীন আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজনের সেই সময়ের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি টুইক করেন, ‘‘রঘুরাম রাজন বলেছিলেন, ২০০৬ -২০০৮ সালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আদায় না করা ঋণ তৈরি হয়েছে। এই সময়ের এমন সংস্থাকেও ঋণ দেওয়া হয়েছে, যাদের আগেও ঋণ না দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। তা সত্ত্বেও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি তাদের ঋণ দিয়েই গিয়েছে।’’
এরপর তিনি জানান বিজয় মাল্য,মেহুল চোক্সী বা নিরব মোদীদের ঋণ না দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রী জানান, মোদী সরকার এই সব আদায় না করা ঋণ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি লিখেছেন, প্রায় ৯৯৬৭টি মামলা হয়েছে, ৩৫১৫টি এফআইআর হয়েছে।বিজয় মাল্য,নীরব মোদী ও মেহুল চোক্সীদের থেকে মোট ১৮ হাজার ৩৩২.৭ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু টাই নয় ইউ পি এ আমলে শুধু ২০০৯ থেকে ২০১৩ অবধি কংগ্রেস সরকার মোট ১ লক্ষ ৪৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ মকুব করেছিলেন এবং এই বর্তমানে সমস্ত ঋণ গ্রহীতার ব্যাপারের কংগ্রেস সরকার নিজস্ব যোগসাজশ কাজে লাগিয়েছিলেন। কাজেই রাহুলের মুখে বড় বড় কথা মানায় না।
তিনি এ ও দাবি করেন, কংগ্রেস এই বিষয়টিকেও রাজনীতির মহড়া হিসেবে ব্যবহার করছে। মানুষের মধ্যে ভ্রান্তি ছড়ানো কংগ্রেসের ঐতিহ্য এবং রাহুল গান্ধী তা বহন করে চলেছেন।তি জানান রাহুল গান্ধী যাকে ঋণ মকুব বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন সেটা আসলে মকুব নয়। শুধুমাত্র নন পারফর্মিং অ্যাসেট হিংসে দেখানো হয়েছে এবং সে টাকা উদ্ধার হবেই।
