ওড়িশার একমাত্র জায়গা, যেখানে শীতকালে বরফ পড়ে! গেলেই বুঝবেন, ‘কাশ্মীর অফ ওড়িশা’ তাকে সাধে বলে না!
পাহাড়-নদী-ঝরনায় ঝলমলে একটা গ্রাম। তার উপর শীতকালের বাড়তি পাওনা বরফ! কফি ক্ষেত, পাইন জঙ্গল আর মশলার বাগান মিলিয়ে ভরপুর সৌন্দর্যে মোড়া দারিংবাড়ি। আরেকটা আকর্ষণ, পাখিরালয়। বিভিন্ন ধরনের পাখি আর প্রজাপতির জন্য এখানকার স্যাংচুয়ারিগুলো বিখ্যাত। তবে দারিংবাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হিল ভিউ পার্ক। সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উঁচু হিল ভিউ পার্কে উঠলে গোটা গ্রামটাই দেখা যায়। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে ডোলুরি নদী। ফুলবনি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পুটুডি ওয়াটার ফল্সের ধার পিকনিক করার হটস্পট! কাছেই রয়েছে দাশিংবাড়ি ফল্সও।
ব্রিটিশ আমলে দারিং সাহেবের বাংলো ছিল এই জায়গায়। সেখান থেকেই দারিংবাড়ি নামকরণ বলে মনে করা হয়। নানারকম মশলার বাগান রয়েছে দারিংবাড়িতে। স্পাইস অ্যান্ড হার্বাল গার্ডেনগুলো ঘুরে দেখতে মন্দ লাগবে না। ১৬ লক্ষ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে থাকা বেলঘর স্যাংচুয়ারিতে দেখা পাবেন বিরল প্রজাতির পাখি আর প্রজাপতির। কপাল ভাল থাকলে মিলতে পারে হাতির দেখাও। জঙ্গল ভালবাসেন যাঁরা, দারিংবাড়ির জঙ্গলে ঘুরে আসাটা তাঁদের অবশ্য কর্তব্য। শীতকালে ভোরের দিকে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে গেলে শিশির জমে গিয়ে বরফ জমে যায়। ঘন জঙ্গলে এ জিনিস দেখার মতো! জঙ্গল আর পূর্বঘাট পর্বতমালার মাঝে ছড়িয়ে আছে অনেকটা ঢালু উপত্যকা। কাশ্মীর ভ্যালির সঙ্গে মিল আছে বইকী! দারিংবাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখুন আদিবাসী গ্রামগুলো। পুরো কন্ধমাল জেলাতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ডোঙ্গরিয়া আর কুটিয়া খোন্দ উপজাতিদের গ্রাম। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম উপজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম এঁরা। প্রকৃতি এখানে দু’হাত ভরে দিতে কসুর করেনি। দারিংবাড়ি সামার ক্যাম্প হিসেবে পর্যটকদের মধ্যে যে রকম জনপ্রিয়, শীতকালেও বহু মানুষ ভিড় জমান জায়গাটায়।
কীভাবে যাবেন: ভুবনেশ্বর থেকে দারিংবাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। ব্রহ্মপুর থেকেও যাওয়া যায়, ১২০ কিলোমিটার দূর। স্টেশনে নেমে গাড়ি নিতে হবে। কাছাকাছির মধ্যে ফুলবনি, বালিগুদা কিংবা উদয়গিরি থেকেও দারিংবাড়ির পৌঁছে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন: যাওয়ার সেরা সময় অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত। তবে সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। হোটেল ইউটোপিয়া কিংবা ডিয়ার ইকো হোমে থাকতে পারেন। এছাড়া পিডব্লিউডি’র বাংলোয় থাকার বন্দোবস্ত হতে পারে, বালিগুদার ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলে। ফুলবনিতে থাকতে পারেন সার্কিট হাউজ বা হোটেলে।