এই লকডাউন আমাদের আর কিছু শেখাক বা না শেখাক খাদ্যের মূল্য দেওয়া শিখিয়েছে। আমরা বেশিরভাগ মানুষই এমন যাদের না আছে বড় জমি না বাড়িতে ছোট সবজির বাগান বেশীরভাগ মানুষই বাজারের উপরই নির্ভরশীল। ভারতবর্ষে অর্ধেকের বেশী মানুষ কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এই কৃষি ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এই মানুষগুলোর।কৃষিতে না আছে উন্নত মানের রাসায়নিক,জল সরবরাহের ব্যবস্থা,আরও আর্থিক ব্যবস্থা।
কৃষির এই সমস্যাগুলো কে মাথায় রেখে বিহারের দুরদি গ্রামের কুমার নিরাজ এমন এক চাষের পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন যাতে খুব সহজেই পরিবেশ দূষন না করে চাষ করে অনেক মুনাফা লাভ করা যায়। তিনি জানালেন ,”আমি দেখলাম আমাদের গ্রামের মানুষরা যে পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে তাতে তাদের কোন লাভই থাকে না। সাথে এই পদ্ধতিতে জমির ফসলের মান নষ্ট হয়ে যায়,কীটের পরিমান বৃদ্ধি পায় আবা জীববৈচিত্র্যও কমে যায়।” এরপরই নিরাজ এগ্রোফরেস্ট্রির কথা তার গ্রামের লোকেদের বোঝালো। এগ্রোফরেস্ট্রি হল এমন একটা বিষয় যে একই জমিতে হরেক রকম ফসল ও বড় গাছের চাষ হবে। যেসব চাষিদের বড় জমি নেই চাষের জন্য তারাও এখান থেকে মুনাফা লাভ করতে পারবে।আর এর ফলে জমির মাটিও আগের চেয়ে উর্বর হবেছ , এরপর নিরাজ খেতি নামে একটি সংস্থা স্থাপন করেন যার উদ্দেশ্যই ছিলো গ্রামের চাষীকে অ্যগ্রো ফরেস্ট্রি সম্পর্কে
সচেতন করবে। এই ভাবেই ক্ষেতি তে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং এরপর তারা গ্রামে প্রায় ২০০০ কৃষককে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে এগ্রোফরেস্ট্রির বিষয়ে।
এরপর পড়াশোনা করতে নিরাজ কর্নাটকে চলে যান কিন্তু সুযোগ পেলেই কাছের গ্রামগুলোতে চাষাবাদের পদ্ধতি দেখতে চলে যেতেন। এরপর তিনি সাস্টেনিবিল ফার্মিং টেকনিক শিখেছিলেন। এরপর তিনি আবার তার সংস্থা ক্ষেতির সাথে কাজ করার জন্য তামিলনাড়ুর গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের বোঝাতে থাকেন। অনেক কৃষক তার বলা পদ্ধতিতে এগোতে রাজিও হয়ে যান।
এরপর কিছু কৃষক ক্ষেতি সংস্থাকে নিজেদের জমি দিয়ে দেয় এগ্রোফরেস্ট্রির জন্য। সেই জমিতেই ক্ষেতির সদস্যরা এগ্রোফরেস্ট্রি করতে থাকে আর উৎপন্ন ফসল এবং মাস গেলে ৫০০০টাকাও সেই কৃষকদের হাতে দেওয়া হয়। এখানে বেশ কিছু কৃষককে এই পদ্ধতি শেখানোও হয় এরপর তারা রাসায়নিক সার ব্যাবহার না করে জীভামুর্থা নামে এক জৈব রাসায়নিক তৈরী করে জমিতে ব্যাবহার শুরু করে। এরপর এই সংস্থা নেদারল্যান্ডের একটি কম্পানির সাথেও কাজ করে ইকোসিস্টেমকে কি ভাবে এগ্রোফরেস্ট্রি ঠিক রাখছে সেই বিষয়ে ক্যাম্প করে। বর্তমানে ক্ষেতি যথেষ্টই স্বনামধন্য একটি সংস্থাতে পরিনত হয়েছে যা শুধু কৃষকদের এগ্রোফরেস্ট্রিমুখীই করছে না আরো পরিবেশ সংক্রান্ত ক্যাম্পেনিং এও গ্রামের মানুষকে উৎসাহিত করে চলেছে